সোমালি জলদস্যু কারা? তাদের আয় কেমন?
- আপডেট সময় : ০৭:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
- / ৫৩ বার পড়া হয়েছে
বিগত কয়েক বছর ধরে চুপ থাকলেও ইদানিং বেশ শোনা যাচ্ছে সোমালি জলদস্যুদের বর্বরতার কাহিনী। আর গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার তাদের হাতে জিম্মি হয়েছে বাংলাদেশী একটি জাহাজ যেটিতে নাবিক সহ ২৩ জন ক্রু রয়েছে। আর জিম্মিদের বিনিময়ে মুক্তিপণ হিসেবে চেয়েছে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা।
সোমালি জলদস্যুদের নাম অনেকবার শুনে থাকলেও অনেকে হয়তো জানেন না তাদের উত্থানের ইতিহাস।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক তারা কিভাবে এত বড় একটি জলদস্যু বাহিনী হয়ে উঠলো।
সোমালিয়া রাষ্ট্রটি প্রথমে ইতালিয়ান ঔপনিবেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৬০ সালে এটি ঐপনিবেশ শাসন হতে মুক্তি পায়। তারপর দীর্ঘদিন সামরিক শাসন চলার পর ১৯৯১ সালে সামরিক শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশটিতে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে প্রায় ২০ বছর ধরে দেশটিতে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগেই ছিলো। এই সময়ে দেশটিতে আসলে কোন সরকার ব্যবস্থা ছিলো না।
আফ্রিকার অন্তর্ভুক্ত এই দেশটির রয়েছে বিশাল উপকূল সমৃদ্ধ জলসীমা। কিন্তু সেখানে ছিলো না কোন নিরাপত্তা বাহিনী বা কোস্টগার্ড। ঠিক সেই সুযোগে এই অঞ্চল গুলোতে বিদেশী মাছ ধরা নৌযানগুলোর আনাগোনা বাড়তে থাকে। যার ফলে স্বভাবতই স্থানীয় জেলেদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই তারা আস্তে আস্তে এসব বহিরাগত নৌযানের প্রতি দস্যুবৃত্তিতে ঝুকে পড়ে।
যেহেতু মাছ ধরার চাইতে জলদস্যুতা করে আয় অনেক বেশি হতো তাই তারা এটাকে আস্তে আস্তে পেশা হিসেবে নিতে থাকে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় সোমালি জলদস্যুদের।
সোমালি জলদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলি ওই এলাকাগুলোতে তাদের সামরিক মহড়া বাড়ায়। এতে করে কিছুদিন নীরব থাকলেও পরবর্তীতে আবার মাথাচারা দিয়ে ওঠে এই কুখ্যাত জলদস্যু বাহিনীটি।
সোমালি জলদস্যদের আয় কত? উদ্দেশ্য কি?
আমরা ছোটবেলায় পড়েছি পূর্ব আফ্রিকাকে হর্ন অফ আফ্রিকা বলা হয়।
হর্ন অফ আফ্রিকা থেকে ২০০৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মোট ৭ বছরে প্রায় ৩৫০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আদায় করেছে এই জলদস্যরা।
এই অর্থের বেশিরভাগ অংশই বিভিন্ন জাহাজের নাবিক ও ক্রুদের জিম্মি করে মুক্তিপণ হিসেবে নেয়া হয়েছে।
শুধুমাত্র ২০১১ সালেই তারা একটি তেলের ট্যাঙ্কার দখল করে। যেটিতে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তেল ছিলো। জাহাজে থাকা দুইজন ফিলিপাইনের ক্রু কে তারা হত্যা করে।
বিগত কয়েক বছর ধরে তেমন তৎপরতা না থাকলেও বাংলাদেশে জাহাজে আক্রমণ তাদের পুনরুত্থানেরই ইঙ্গিত দেয়। যদি এখান থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতে পারে তাহলে ধারণা করা যায় যে মৌসুমজুড়ে নৌ ডাকাতি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
জলদস্যদের সাথে মোকাবেলা করা কঠিন কেন?
সমুদ্রপথে চলাচলের সময় জাহাজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া থাকে যত সম্ভব দ্রুতগতিতে বা লুকআউটের মাধ্যমে চলা। যাতে জলদস্যুরা সহজে ধরতে না পারে।
কিন্তু জলদস্যুরাও কম নয়। তারা রাতের অন্ধকারে আচমকা আক্রমণ চালায়। এতে জাহাজে থাকা লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাহাজটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়।
একবার কোন জাহাজ জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে সেটি উদ্ধার করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতি পদে পদে জাহাজে থাকা ক্রুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে এবং হতাহতের আশঙ্কা বাড়ে। তাই এরকম পরিস্থিতিতে মোকাবিলা করা অনেক কঠিন।